সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
উজিরপুর প্রতিনিধি॥ বরিশালের উজিরপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল আহসান একজন মানবদরদী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ইতোমধ্যে সর্বমহলে পরিচিতি অর্জন ও সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরু থেকে এর বিরুদ্ধে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন।
তিনি মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য মনে করে ও ভয়কে জয় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা, করোনারোগীদের বাড়ি লকডাউন করা, কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া ও সচেতন করাসহ নানাভাবে এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। মহাদুর্যোগ মুহূর্তে এলাকাবাসীর পাশে সার্বক্ষণিক থাকার মানসে তিনি থানায় ‘ঘরবসতি’ গড়ে তুলেছিলেন। উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়নের পীরেরপাড় নামক স্থানে রাস্তার পাশে বৃষ্টির মধ্যে সারা রাত ধরে পড়ে থাকা মধ্যবয়সী এক পাগলের লাশ করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দাফন করতে যখন কেউ এগিয়ে আসছিলেন না ঠিক সেই মুহূর্তে খবর পেয়ে তিনি এগিয়ে গিয়ে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এছাড়া করোনার মধ্যে উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের সোনারবাংলা বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে এক পাগলী সন্তান প্রসব করে। খবর পেয়ে সেখানে তিনি ছুটে গিয়ে ওই পাগলী মা ও তার নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে ওই শিশুটিকে আগৈলঝাড়ায় বেবি হোমে রাখার ব্যবস্থা করে দেন তিনি।
এমন মানবসেবার অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে তার কর্মজীবনে। ১৯ মার্চ লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি প্রিয়তমা স্ত্রী ও প্রিয় সন্তানদের স্নেহ ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে ও নিজে বঞ্চিত হয়ে তাদের ঢাকার বাসায় ফেলে রেখে উজিরপুরে সার্বক্ষণিক অবস্থান করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি শনিবার জ্বর ও মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হন। ওই দিন তার নমুনা সংগ্রহ করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে পাঠানোর পরে রোববার (২১ জুন) রাতে তার রিপোর্ট করোনা পজিটিভ আসে। ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’-খ্যাত এ চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে থানায় নিজ ব্যাচেলর কোয়ার্টারে আইসোলেশনে আছেন।
তার অসুস্থতার কথা শুনে উজিরপুর ছাড়াও তার পুরনো কর্মস্থল বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জ ও মুলাদী থানার মানুষও সমব্যথী। তার আশু সুস্থতার জন্য এসব এলাকার মানুষও দোয়া করছেন।
এ প্রসঙ্গে জিয়াউল আহসান বলেন, দেশ ও মানুষের সেবা করার মহান ব্রত নিয়ে পুলিশে চাকরি নিয়েছি। করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমৃত্যু দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি তার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
Leave a Reply